বিড়ালের ডায়রিয়া ও বমি হলে করণীয়
বিড়ালের ডায়রিয়া ও বমি খুবই কমন একটি রোগ। বাসার পোষা বিড়াল, বিশেষত পার্সিয়ান ও অন্যান্য দামি ব্রিডের বিড়াল খুব দ্রুত এইসব সমস্যায় পড়ে। ডায়রিয়া ও বমি হলে সবাই খুব ভয় পেয়ে যায় ও প্যানিক শুরু করে। ভয়ের কিছু নেই। খুব ছোট-খাট কিছু পদক্ষেপেই দ্রুত এ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই বলে একেবারে গা ছাড়া দিয়ে বসে থাকলেও চলবে না। যত দ্রুত আপনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন, ততই মঙ্গল!
করণীয়ঃ
বিড়ালের যেকোন রোগে প্রথম কাজ হচ্ছে দ্রুত ভেটেনারি ডক্টর (পশুর ডাক্তার) এর শরণাপন্ন হওয়া। কিন্তু যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে নীচের কাজগুলো শুরু করতে পারেনঃ
০১। বমি বা ডায়রিয়া হলে সাধারণত বিড়াল খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। পশু ডাক্তারদের তথ্যমতে, এসময় খেতে না চাইলে ২০-২৪ ঘন্টা পর্যন্ত বিড়ালকে খাবারের জন্য জোর করার প্রয়োজন নেই। তবে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়াতে হবে। খেতে না চাইলে জোর করে খাওয়াতে হবে। এক দুই ঘন্টা পরপর চিকন সিরিঞ্জ (সুঁই ছাড়া) দিয়ে পানি খাওয়াবেন। মুখ হাঁ না করলে মুখের কোণায় হালকা চাপ দিলে মুখ খুলবে। সিরিঞ্জ গলার কাছে নিয়ে আস্তে আস্তে চেপে দিবেন। অনেকে স্যালাইন খাওয়ান, কিন্তু শুধু পানিই বেশি ভালো হবে।
০২। ২০ ঘন্টা পরও কিছু না খেলে চিকেন স্টক খাওয়াতে হবে। লবন মসলা ছাড়া মুরগী সিদ্ধ করলে যে পানিটা পাওয়া যায়, সেটাই চিকেন স্টক। চিকেন স্টক সিরিঞ্জে নিয়ে একইভাবে খাওয়ানো যাবে। জোর করে খাওয়ানোর সময় বেশি চাপাচাপি না করে আস্তে আস্তে আদর করে কথা বলে বলে খাওয়াবেন।
০৩। চাইলে নরম মাংস ব্লেন্ড করে চিকেন স্টকের সাথে মিশিয়ে দিতে পারেন। সেটাও সিরিঞ্জে দিতে হবে। ব্লেন্ড করা চিকেন স্বাভাবিকভাবে সিরিঞ্জে না ঢুকানো গেলে সিরিঞ্জের ধ্বাক্কা দেয়ার কাঠিটা টেনে বের করে সিরিঞ্জের পেছন দিয়ে টিউবে ব্লেন্ডেড চিকেন দিতে হবে। চিকেন ছাড়া অন্য কোন খাবার দিবেন না। মাছ, ভাত, দুধ, কিছুই না।

০৪। এইবার যে ব্যাপারটায় আসবো তা একটু আজব মনে হতে পারে, কিন্তু বিড়ালের ক্ষেত্রে এটা কাজে দেয়। সেটা হলো কচি ঘাস। কচি ঘাসের রস বিড়ালের হজমের জন্য উপকারি। কিছু ঘাস কেটে এনে ওদের সামনে দিন, কামড়া কামড়ি শুরু করবে। এটা পরীক্ষিত প্রকৃয়া।
(বিড়ালের ঘাস খাওয়ার ভিডিও পাবেন এখানে।
০৫। ক্রিমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। নিজে নিজে আন্দাজে ওষুধ না কিনে ভেটের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে খাওয়াবেন।
০৬। এরপরো ভালো না হলে দ্রুত ভালো ভেট দেখান।
নীচের ভিডিওতে অসুস্থ বিড়ালকে জোর করে খাওয়ানোর প্রকৃয়া দেখানো হচ্ছেঃ
প্রতিরোধ
এতক্ষণ তো গেল ট্রিটমেন্ট। এবারে আসি প্রতিরোধের ব্যাপারে। কি কি কাজ করলে পেট খারাপ বা বমি হবে না সেটা এবারে জেনে নেয়া যাকঃ
০১। গরুর দুধ দিবে না। অনেকে গরুর দুধ পানিতে মিশিয়ে পাতলা করে দেয়। তাতে খুব একটা সমস্যা না হলেও, একেবারেই না দেয়াটাই উত্তম। যদি ছোট বিড়াল ছানা হয়, তাহলে ল্যাকটোজেন ১ দিতে পারেন। যেকোন ফার্মেসি বা মুদি দোকানে পাবেন।
০২। একটু খেয়াল রাখবেন যাতে তেলাপোকা না খায়। বিষ খেয়ে মারা গিয়েছে এমন ইঁদুর খেলেও প্রচুর সমস্যা হয়, তাই ইদুর থেকেও সাবধান থাকবেন।
০৩। তিনমাস পর পর ভেটের কাছে নিয়ে ক্রিমির ওষুধ খাওয়াবেন। কৃমি বেশি হলে পেট খারাপ হয়।
০৪। হুট করে খাবার বদলে দিবেন না। একটু একটু করে বদলাবেন। বিশেষ করে কেনা ক্যাটফুড যারা খাওয়ান, তারা ব্র্যান্ড বদলানোর সময় আগের ব্র্যান্ডের সাথে মিশিয়ে মিশিয়ে আস্তে আস্তে শিফট করবেন।
০৫। মশলাযুক্ত ও লবনযুক্ত খাবার দিবেন না। শুধু সেদ্ধ করা খাবার দিবেন।
সবশেষে......
যাদের বিড়াল পোষার অভিজ্ঞতা নাই, তারা এই ব্লগ পড়ে অট্টহাসিতে ফেটে পরতে পারেন। স্বাভাবিক। সারাজীবন আমরা দেখে এসেছি বিড়ালকে মোটামুটি যা দেই তাই হুড়ুমুড় করে খেয়ে দিব্যি বেঁচে থাকে, এত নিয়ম ছাড়াই তারা বাঁচে, তাহলে পোষা বিড়ালের ক্ষেত্রে এত "ঢং" এর কী আছে। এক্ষেত্রে যেকথা বলা বাঞ্জনীয় তা হল, বিড়াল বছরে যে পরিমাণ বাচ্চা দেয়, তার বেশিরভাগই মারা যায়, বাঁচে না। এজন্য খেয়াল করলে দেখবেন, একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বহুদিন পর্যন্ত একই বিড়াল দেখা যায়, কুকুরের মত সংখ্যায় বাড়ে না। এর কারণ হলো বিড়াল খুব মৃত্যুপ্রবণ প্রাণি। একটু এদিক সেদিক হলেও মরে যায়। কেউ ডায়রিয়ায়, কেই ঠান্ডায়, কেউ ক্ষুধায়, কেউ কুকুরের কামড়ে, কেউ বা অন্য বিড়ালের কামড়ে মরে। এসবের সাথে যুদ্ধ করে যে দুই একটা বেঁচে যায়, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক অনেক বেশি হয়। রেস্কিউ করা বাচ্চা, ঘরে পালিত বিড়াল বা দামী ব্রিডের বিড়াল এত শক্ত সামর্থ হয় না। তাই এদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা জরুরি।
আশা করি লেখাটিতে আপনারা উপকৃত হবেন। শুভ কামনা রইল।