বয়সভেদে বিড়ালের খাবার
বিড়ালকে কি খাওয়নো যাবে আর কি খাওয়ানো যাবে না, তা নিয়ে আমাদের ধারণা খুব কম। রাস্তার বিড়ালকে সব খেতে দেখে আমাদের ধারণা হয়ে গিয়েছে যে, বিড়াল সব খায়। ভাত, মাছ, কাঁটা, হাড্ডি, দুধ, যা দিচ্ছেন তাই তো খাচ্ছে, তাহলে খাওয়া নিয়ে এত চিন্তার কি আছে! আসলে বিষয়টা হচ্ছে কি, রাস্তার বিড়াল আর পোষা বিড়ালের হিসাব সম্পূর্ণ আলাদা। রাস্তার বেশিরভাগ বিড়াল বাচ্চা থাকতেই মারা যায়, কখনো ডায়রিয়ায়, কখনো সর্দিতে, কখনো না খেয়ে, কখনো অন্যান্য কুকুর বিড়ালের কামড়ে। এজন্য কোন নির্দিষ্ট এলাকায় বিড়ালের সংখ্যা সবসময় একই থাকে, কুকুরের মত বাড়ে না। এত কষ্ট আর রোগের সাথে যুদ্ধ করে যেগুলো বেঁচে থাকে, তাদের পেটে সব হজম হয়। কিন্তু রেসকিউ করা পোষা বিড়াল বা দামি ব্রিডের বিড়ালের ক্ষেত্রে হিসাব অন্যরকম। তারা খুবই নাজুক প্রাণী আর অল্পতেই অসুস্থ হয়ে যায়। যারা বিড়াল নতুন নতুন পুষবেন তাদের এসব জানা জরুরি।
০১। বয়স একমাসের কমঃ
এই বয়সের বাচ্চাদের মায়ের দুধ ছাড়া আর কিছুই দেয়া যাবে না। এতিম রেসকিউ করা বাচ্চা হলে তাকে ল্যাকটোজেন ১ পাতলা করে দিতে হবে। বাচ্চা বিড়ালছানার খাবার বিস্তারিত জানতে এইখানে ক্লিক করুন
০২। বয়স এক থেকে তিনমাসঃ
দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার দিতে শুরু করুন। মসলা ও কাঁটাছাড়া মাছ সেদ্ধ অল্প পানিতে গুলে খেতে দিন। মুরগি সিদ্ধ করে ব্লেন্ড করে ফেলুন, এরপর একটু পানিতে গুলে খেতে দিন। বারবার এত ঝামেলা করার সময় না থাকলে অনেক মাছ বা মাংস সেদ্ধ করে পেস্ট করে ফ্রিজে রেখে দিন, এরপর একটু গরম পানি মিশিয়ে খাবারটিকে কুসুম গরম করে খেতে দিন। এছাড়া অনলাইনে কিটেন ফুড সরাসরি অর্ডার দিতে পারেন। আরো সুস্বাদু করতে চাইলে কলিজা মেখে দিতে পারেন। অনেকসময় এই বয়সের বিড়াল বাটিতে খেতে পারেনা, তাকে ফ্ল্যাট বা সমতল কিছুতে খেতে দিতে পারেন। দুধ থেকে যখন অন্য খাবারে শিফট করবেন, মনে রাখবেন, পরিবর্তনটা যাতে হুট করে না হয়। অল্প অল্প করে শুরু করুন। পরে একটু বাড়িয়ে বাড়িয়ে আস্তে আস্তে দুধ খাওয়ানো সম্পুর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে। ভাত না দেয়াই ভালো।

০৩। তিনমাসের বড়
এই সময় বিড়াল মাছ, মাংস, কলিজা, ভাত, ড্রাই ক্যাটফুড সবই খায়। নিজে সিদ্ধ করে দিতে পারেন অথবা অনলাইনে ড্রাইফুড অর্ডার দিয়ে খাওয়াতে পারেন।
০৪। প্রেগনেন্ট ও দুগ্ধবতি বিড়ালঃ
প্রেগনেন্ট বিড়ালের একটু বেশি পুষ্টি লাগে। ওকে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি অনলাইনে কেনা কিটেন ফুড দিতে পারেন। এই অবস্থায় ওরা স্বাভাবিকের তুলনায় দ্বিগুণ খায়। খেয়াল রাখবেন ঠিকমত খাবার পাচ্ছে কিনা।
০৫। সাত বা তার অধিক বয়স্ক বিড়ালঃ
এই বয়সে বিড়ালের দাঁত পড়ে যায়, তাই তারা আর শক্ত খাবার খেতে পারেনা। তাদের মাছ বা মুরগি সেদ্ধ খাওয়াতে পারেন। হাড় ও কাঁটা বেছে দিতে হবে। অনেক সময় বয়স্ক বিড়াল নিজে খেতে পারেনা, তখন তাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে হবে।
যা যা কখনই খাওয়াবেন নাঃ
০১। গরুর দুধঃ বিড়ালের জন্য গরুর দুধ নিষিদ্ধ। অনেকে পানি মিশিয়ে পাতলা করে খাওয়ায়, কিন্তু একেবারে না দেয়াই ভালো।
০২। লবনঃ লবন খেলে বিড়ালে লোম বেশি বেশি পড়ে। লবন ছাড়া খাবার দিবেন।
০৩। মশলা-পেঁয়াজঃ মসলা পেঁয়াজ রাস্তার বিড়ালের হজম হলেও পোষা বিড়ালের হয় না।
০৪। মানুষের ওষুধঃ মানুষের কোন ওষুধ (নাপা, এন্টাসিড) ভুলেও খেতে দিবেন না।
০৫। ফ্রিজের ঠান্ডা খাবারঃ ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার সরাসরি দিলে সর্দি লেগে যাবে। তাই ফ্রিজের খাবার খেতে দেয়ার আগে হালকা গরম করে নিবেন। ফ্রিজের খাবারে অল্প গরম পানি মিশিয়েও খেতে দিতে পারেন। শুধু খেয়াল রাখবেন, খাবার যেন হিমশীতল না হয় বা অতিরিক্ত গরম না হয়।
এছাড়াও যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন
০১। বিড়াল যেন যথেষ্ঠ পানি খায়।
০২। পার্সিয়ান বা অন্যান্য দামি বিড়াল ভেট বা পশুর ডাক্তারের পরামর্শমত নির্দিষ্ট খাবার দিবেন।
০৩। হুট করে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনবেন না। যারা দোকানের ক্যাটফুড খাওয়ান, তারা ব্র্যান্ড বদলাতে চাইলে অল্প অল্প করে মিশিয়ে মিশিয়ে বদলাবেন।
০৪। সপ্তাহে একদিন ঘাস খেতে দিন। ঘাস কেটে এনে সামনে দিবেন, নিজে নিজে চিবুবে, জোর করবেন না। ঘাসের রস ওদের হজমের জন্য ভালো।